‘সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল’—জীবনানন্দ দাসের কবিতার লাইনের মতো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদেরও এখন সেই সময় এসে গেছে। ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার সময় এসেছে। বাংলাদেশ দলকে টেনে তোলার এই কঠিন ভার আর বইতে পারছেন না তিনি।
এক সময়ের এই অলরাউন্ডার এখন বোলিংয়ে আসেন কালেভদ্রে। ব্যাটিংয়েও আর নেই সেই ধার। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবশেষ ফিফটি পেয়েছেন ১১ ইনিংস আগে। মাঝে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিলেন মলিন। সাম্প্রতিক অতীতে নেই বলার মতো কিংবা মনে রাখার মতো একটা ম্যাচজয়ী ইনিংস।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে যখন প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালের সমীকরণ মেলানোর সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে। উইকেটে যখন নায়ক হওয়ার সুযোগ এই অভিজ্ঞ ব্যাটারের সামনে তখনও কিছু করতে পারেননি তিনি। অনেকেই ভেবেছিলেন সেটাই হয়তো তার শেষ ম্যাচ।
এরপর পদ্মায় বহু জল গড়িয়েছে। এই ফরম্যাটকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। জানিয়ে দিয়েছেন অনেক হয়েছে, এবার নতুনদের সুযোগ করে দেওয়ার পালা। তারও বহু আগে প্রয়োজন ফুরিয়েছে বুঝতে পেরে, এই ফরম্যাটকে বিদায় জানিয়েছেন বাংলাদেশের পঞ্চ পাণ্ডবের আরও তিন সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবাল। এখন রইল বাকি এক, মাহমুদউল্লাহ।
মাহমুদউল্লাহর বর্তমান বয়স ৩৮ পেরিয়ে ৩৯ ছুঁইছুঁই। বলা হয়ে থাকে টি-টোয়েন্টি তরুণদের খেলা। এখানে শক্তি ও সামর্থ্যের প্রয়োজন পড়ে বেশি। হতে হয় স্কিলফুল। উইকেটে নেমে প্রথম বল থেকেই মারতে হয়। মাহমুদউল্লাহর ওপর সেই দায়িত্বটা আরও বেশি। একে তো দলের সবচেয়ে সিনিয়র ক্রিকেটার তিনি। তার ওপর তার ব্যাটিং পজিশনও দাবি করে উইকেটে এসেই ব্যাট চালাবেন তিনি। বাংলাদেশকে টেনে যেমন তুলবেন তেমনি ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়বেন। যা বহুদিন দেখা যাচ্ছে না মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ে।
এই ফরম্যাটে মাহমুদউল্লাহর পরিসংখ্যানও বলছে সে কথা। ১৩৯ ম্যাচে ১২৮ ইনিংস ব্যাট করা মাহমুদউল্লাহর রান ২৩৯৫। যেখানে গড় ২৩.৪৮ ও স্ট্রাইক রেট ১১৭.৭৪। ২০২২ সালে যেটা আরও নিচে নেমে গিয়ে হয়েছে গড় ১৮.৮৭ ও স্ট্রাইক রেট ১১০.২১। আর ২০২৪ সালে এখন সেটা ২২.৭৫ ও ১২১.৩৩।
এই পরিস্থিতিতে আগামী ২০২৬ বিশ্বকাপ সামনে রেখে দল গোছানোর কথা বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের। সেই বিশ্বকাপ সামনে রেখে ভারতের বিপক্ষেই প্রথম সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ। যেখানে নতুন পরিকল্পনায় নতুন উদ্যমে শুরু হবে নতুন বাংলাদেশের। দলে সুযোগ পাবে ২০২৬ বিশ্বকাপে বিবেচিত হবেন এমন ক্রিকেটাররা। কিন্তু প্রশ্ন হলো- মাহমদুউল্লাহ কি তবে থাকছেন সেই বিশ্বকাপে? হিসেবে বলছে সেখানে তার থাকার সুযোগ নেই বললেই চলে। একে তো বয়স বেড়েছে, দ্বিতীয়ত ফর্ম নেই তার। যার ফলে বাদ পড়লে নতুন করে সুযোগ পাওয়া কঠিন। ক্রিকেট বোদ্দাদের অনেকেই মনে করছেন—এই অবস্থায় মাহমুদউল্লাহ নিজে যদি বাকিদের মতো সরে যেতেন সেটাই হতো আদর্শ।
গতকাল ভারতের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মায়াঙ্ক যাদবকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে যেভাবে ক্যাচ আউট হয়ে ২ বলে ১ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন মাহমদুউল্লাহ, তাতে ফুটে উঠেছে তার অসহায়ত্ব। যেই মাহমুদউল্লাহকে দেখে বড্ড মায়া হয়েছে তার ভক্তদের। এমন আউটের পর অনেকেই তাকে অবসর নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই অবস্থায় তাই প্রশ্ন উঠেই- মাহমুদউল্লাহ; এখন নয়তো কখন?
Leave a Reply