চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। ইতোমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের ৯ জেলায় স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। বুধবার (২৩ অক্টোবর) থেকে শনিবার (২৬ অক্টোবর) পর্যন্ত রাজ্যের স্কুলগুলো বন্ধ থাকবে। এছাড়া, আপৎকালীন কাজের জন্য অনেক সরকারি অফিসেই কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র সম্ভাব্য ভয়াবহতা নিয়ে মঙ্গলবার ২২ (অক্টোবর) রাজ্য সরকারের সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেউ গিয়ে কোনো বিপদে পড়ুক সেই ঝুঁকিটা আমরা নিতে চাই না। তাছাড়া অনেক সময় দূর্গত এলাকার মানুষদের নিয়ে এসে স্কুলে রাখতে হয়। একই সঙ্গে ওই সময়সীমার মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলায় অবস্থিত সব ‘ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস’ (আইসিডিএস) বন্ধ রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে যে ঘূর্ণাবর্তা সিস্টেম রয়েছে, সেটা থেকে একটা নিম্নচাপ তৈরির জোরালো সম্ভাবনা আছে। এটা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে এরকম একটা আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারতের আবহাওয়া দপ্তর এবং আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে সেটা শক্তি বাড়িয়ে শক্তিশালী ঝড় হিসাবে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাত থেকে শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) সকালের মধ্যে পুরি এবং সাগরদ্বীপের যে কোনো স্থানে আঘাত হানবে।
মমতা ব্যানার্জী বলেন, আঘাত হানার সময় বাতাসের গতিবেগ প্রতি ঘন্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার হতে পারে। কিন্তু কোথাও কোথাও প্রতি ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা হাওয়া বইতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। এছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতেও এর প্রভাব পড়তে পারে যেমন কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, সমুদ্রের ধারে পর্যটকদের আনাগোনায় বিধিনিষেধ জারি করা হচ্ছে। প্রকৃতি কখন তার ভয়াল রূপ ধারণ করবে সেটা আমরা কেউ জানি না, তাই আমরা আগামীকাল থেকে ব্যবস্থা নিচ্ছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে।
তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গ নদীমাতৃকা দেশ বলে এখানে ঝড়-বৃষ্টি বেশি হয়। এ কারণে আমাদের অনেক সাইক্লোন সেন্টার তৈরি আছে। তাছাড়া অনেক সময় স্কুল, কলেজেও ত্রাণ শিবিরের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এছাড়াও কলকাতার আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চল ও উড়িষ্যা উপকূলের মধ্যে কোনো এক জায়গায় আছরে পড়তে পারে ‘দানা’। এর প্রভাবে গভীর নিম্নচাপ তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হতে পারে।
এদিকে, পর্যটকদের সমুদ্রে নামার ক্ষেত্রে জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। মৎস্যজীবীদের আগামী কয়েকদিন সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই যারা সমুদ্রে মাছ ধরতে চলে গেছেন তাদের সবাইকে দ্রুত ফিরে আসতে বলা হয়েছে। উপকূল সংলগ্ন এলাকায় থাকা মানুষদের দ্রুত নিরাপদ স্থানের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে চলছে মাইকিং।
ঘূর্ণিঝড় দানার সম্ভাব্য পরিণতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে পূর্ব রেল। পশ্চিমবঙ্গে এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত আনতে পারে বলে প্রস্তুতি হিসাবে পূর্ব রেলের সব বিভাগ আগাম সর্তকতামূলক বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। ২৩ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব রেল ১৩৫ টি ট্রেন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে যেন বিমান চলাচলে কোনো অসুবিধা না হয় বা বিপদ এড়াতে যে কোনো ব্যবস্থা নিতে তৎপর রয়েছে কলকাতার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
Leave a Reply