কারাতে প্রশিক্ষণ সেমিনারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের গুণকীর্তন করে রচিত সংগীত বাজানোর অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার যশোর জিমনেশিয়ামে সোতোকান কারাতে প্রশিক্ষণ ও সেমিনার থেকে তাদের আটক করা হয়। যদিও এর প্রায় ৮ ঘণ্টা পর মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
যশোরে বাংলাদেশ কারাতে অর্গানাইজেশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানের ‘থিম সং’-এ শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ থাকায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক (ডিসি) আজাহারুল ইসলাম বিব্রতবোধ করেন। পরে তিনি ওই ৫ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।
আটকৃতরা হলেন- দৈনিক স্পন্দনের ফটো সাংবাদিক ও যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক ইমরান হাসান টুটুল, কারাতে অর্গানাইজেশন যশোর জেলার শাখার সভাপতি হুমায়ুন কবীর, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জয়তী সোসাইটির পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস ও শেকড় যশোরের সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা রাসু।
সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার ছিল দুই দিনের কারাতের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। প্রতিযোগিতায় নেপাল ১৬, ভারত ২, নেপাল ১ এবং বাংলাদেশের ১০ জেলার মোট ৩২০ জন অংশ নেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শেকড় যশোরের কর্মীরা নৃত্য পরিবেশন করে।
ওই নৃত্যানুষ্ঠানে যশোরের পরিচিতি তুলের ধরার জন্য ‘থিম সং’ বাজানো হয়। ওই গানের শেষের দিকে যশোরের শেখ হাসিনা আইটি পার্কের কথা উল্লেখ করা হয়। গানটি অনেক আগেই রেকর্ড করা। ওই গানে শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ থানায় ডিসি সাহেব বিব্রতবোধ করেন। পরে তিনি জিমনেশিয়ামের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলে পুলিশ গেট বন্ধ করে দেন। সেখান থেকে তাকে এবং সভাপতি হুমায়ুন কবীর, রওশন আরা রাসু, এবং ইমরান হাসান টুটুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে আসে।
এ ছাড়া অর্চনা বিশ্বাসকে মোবাইলে থানায় ডেকে নিয়ে হেফাজতে নেয় পুলিশ। ওই অনুষ্ঠানে অর্চনা বিশ্বাস অতিথি হিসেবে অংশ নেন। তিনি অনুষ্ঠানের শেষের দিকে হট্টগোল শুরু হলে বাড়িতে চলে যান। পরে পুলিশ তাকে খবর দেয়।
তিনি আরও বলেন, ওই গানটি অসর্তকতাবশত বাজানো হয়েছিল। এজন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে।
রওশন আরা রাসু বলেন, আমি সাংস্কৃতিক কর্মী। শেকড় নামে আমার একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। আয়োজকরা জানিয়েছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একটি সাংস্কৃতিক পর্ব থাকবে। সেখানে কয়েকটি নাচের পর্ব থাকবে। তাই আমার সংগঠনের কয়েকজন শিশুকে দিয়ে সেখানে নৃত্য পরিবেশন করে। যশোরের ব্র্যান্ডিং গান হিসেবে পরিচিত ‘খেজুর গুড় আর ফুলের মেলা, নকশিকাঁথার যশোর জেলা’ শিরোনামে গানটিতে নৃত্য পরিবেশন করে তারা। এই গানে যশোরের উন্নয়ন নিয়ে কথা রয়েছে। ভিন্ন কোনও উদ্দেশ্য ছিল না আমাদের।
সাংবাদিক ইমরান হাসান টুটুল জানান, তিনি সংবাদ সংগ্রহের জন্য ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। কী কারণে তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে, তা তিনি জানেন না। একই কথা বলেছেন জয়তী সোসাইটির পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস। তার দাবি, তিনি অতিথি হিসেবে সেখানে গিয়েছিলেন।
অর্চনা বিশ্বাস যশোরের মুজিব সড়কে অবস্থিত ‘জয়তী সোসাইটি’ নামে একটি সংস্থার পরিচালক। নারী অধিকার সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গত সরকারের আমলে (২০২১) তাকে রোকেয়া পুরস্কার দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, অনুষ্ঠানের উদ্বোধন শেষে নাচের অনুষ্ঠানে ফ্যাসিস্ট সরকারের উন্নয়নের গান বাজানো হয়েছিল। এটা পরিকল্পিত বলে মনে হয়েছে। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশ পালন করেছি মাত্র। পাঁচ জনকে থানায় নিয়ে এসে সসম্মানে রাখা হয়। সবশেষ তারা ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেয়ায় রাত ৮টার দিকে ছেড়ে দেয়া হয়।
Leave a Reply