free tracking

ফেসবুক লাইভে বাঁচার আকুতি, সুমনের মৃত্যু ঘিরে রহস্য!

নওগাঁর পত্নীতলায় ফেসবুক লাইভে বাঁচার আকুতি জানানোর প্রায় এক ঘণ্টা পর গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় সুমন হোসেন (২৪) নামের এক তরুণের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার (১৭ নভেম্বর) উপজেলার পদ্মপুকুর বালকাপাড়া গ্রাম থেকে রাত ১১টার দিকে সুমনের মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা গেছে, সুমন হোসেন মহাদেবপুর উপজেলার বিলছাড়া চকপাড়া গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দিনের ছেলে। তিনি পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড মসজিদ মার্কেটের সুমন ফটোস্ট্যাটের মালিক। মরদেহ উদ্ধারের প্রায় এক ঘণ্টা আগে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন সুমন। সেসময় ছিনতাইকারীরা তার কাছে থাকা ১০ লাখ টাকা ছিনতাই করে তাকে হত্যা করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সুমনের ফেসবুক লাইভের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

সুমনের ৫ মিনিট ২২ সেকেন্ডের ফেসবুক লাইভ থেকে জানা যায়, বুলবুল নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে সুদের বিনিময়ে ৭০ হাজার টাকা ধার করেন সুমন। সঙ্গে ফাঁকা ব্যাংক চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়া হয়। কিন্তু পরে বুলবুল তার কাছ থেকে ১০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা পান বলে চাপ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বুলবুলকে টাকা দেয়ার জন্য সুমন মহাদেবপুর থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে রোববার রাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে গ্রামের বাড়ি বিলছাড়া চকপাড়া গ্রামে ফিরছিলেন। ফেরার পথে নাদৌড় মোড় এলাকায় পৌঁছালে দুষ্কৃতকারীরা সুমনকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে সঙ্গে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সুমন পালিয়ে ফেসবুকে লাইভে এসে তাকে বাঁচানোর আকুতি জানান। ছিনতাইকারীরা তার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে হত্যার জন্য খুঁজছে বলেও দাবি করেন সুমন।

স্থানীয় একই এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমিন ও রুবেল হোসেন বলেন, রাতে আমরা ৪ জন চারজন এক জায়গায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এসময় রাত ১০টার দিকে ফোন দিয়ে সুমন বলতেছে ভাই আমাকে বাঁচা। কি সমস্যা তখন বলতেছে বুলবুল নামের একজন আমার থেকে দশ লাখ টাকা কাড়ে নিছে ও আমাকে মারার জন্য ধাবরাচ্ছে, লাঠি চাকু নিয়ে তার সাথে আর আট দশ জন আছে। ফোনে অনেকবার বলছে বুলবুল আমাকে মারে ফেলে দিবে ভাই। আমাকে চাকু নিয়ে ধাবরাচ্ছে ভাই। আমি ধান বাড়ির ভিতরে শুয়ে থেকে ফোন দিছি। যে ভাবেই হোক আমাকে বাঁচা। এর পর রাত সাড়ে ১০টার নাপিত পকুরা নামক স্থানে গিয়ে কাঠাঁল গাছে রশি দিয়ে ঝুলন্ত আবস্থায় তাকে পাই আমরা। তার পর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার সুমনকে মৃত ঘোষণা করে।

পত্নীতলা উপজেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর সদস্য মারুফ মোস্তফা বলেন, সুমন নজিপুর সরকারি কলেজ ডিগ্রী ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। মৃত্যুর আগে সে ফেসবুক লাইভে ছাত্র জনতার কাছে বিচার চেয়েছিল। এই স্টেটমেন্ট দেওয়ার পর তার রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এটা পুরোটাই হত্যাকাণ্ড ছিলো। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত বুলবুলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে পত্নীতলা থানার ওসি শাহ্ মো. এনায়েতুর রহমান বলেন, নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে সুমনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্টে গলাছাড়া শরীরের অন্য জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে সুমনের ভাইরাল হওয়া ফেসবুক লাইভ ভিডিও আমাদের নজরে এসেছে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত থানায় মামলা করা হয়নি। তবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এ ঘটনার পর ব্যবসায়ী বুলবুলকে পুলিশ খুঁজছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *