free tracking

‘সবার জন্য দোয়া করে গেলাম, এমন বউ জানি কারো কপালে না জুটে’

গাজীপুরের শ্রীপুরে তিনতলা ভবনের একটি কক্ষ থেকে মীম আক্তার নামে ২২ বছর বয়সী এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় মরদেহের পাশ থেকে ওই গৃহবধূর স্বামীর তার মায়ের কাছে লেখা একটি চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে। গত বুধবার (২৬ জুন) দুপুরে উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের মাওনা উত্তরপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদের বাড়ির তিনতলার একটি কক্ষ থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত মীম (২২) সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার মুলকান্দি ছোট বেড়া খারুয়া ছোটপাড়া গ্রামের ইউসুফ আলীর মেয়ে। সে টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি থানার কালাই গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে আল আমিন (২৪) এর স্ত্রী।

আল আমিন শ্রীপুরের মাওনা গ্রামের স্বাদ গ্রুপের স্বাদ টেক্সটাইল মিলে সিনিয়র হেলপার পদে চাকরির সুবাদে স্ত্রীকে নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস করতেন। বাড়িটির তত্ত্বাবধায়ক মো. মোস্তাকিম জানান, ৩ মাস আগে মীম-আল আমিন দম্পতি ওই বাড়ির তিন তলার ৩৩ নাম্বার রুমে ভাড়ায় ওঠেন। বুধবার দুপুর ১টার দিকে আল আমিনের সহকর্মী আরিফ বাসায় এসে জানান, আল আমিন তার স্ত্রী মীমকে হত্যা করে কক্ষে তালা মেরে গিয়েছে। মীমকে হত্যার পর আল আমিন বিষয়টি কারখানায় গিয়ে সহকর্মী আরিফকে জানিয়েছেন। পরে তিনি বিষয়টি বাড়ির অন্যদের জানান, পাশাপাশি পুলিশে খবর দেন।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ৬ ঘণ্টার মধ্যেই র‍্যাব-১ খুনি আল আমিনকে জামালপুর থেকে গ্রেপ্তার করে। ‌র‍্যাব-১ কোম্পানির কমান্ডার জানান, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র চাওয়া নিয়েই নিয়মিত ঝগড়াঝাঁটি হতো স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে। তারই রেশ ধরে আলামিন পরিকল্পনা করে রশি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মীমকে। খুন করার পর পরিকল্পনা অনুযায়ী সকলের সহানুভূতি পাওয়ার আশায় মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে স্ত্রীর বিরুদ্ধে চিঠি লিখে পালিয়ে যায়।

গাজীপুর সিপিএসসি পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর জুন্নুরাইন বিন আলম বলেন, মীম তার স্বামীর কাছ থেকে ছোট ছোট আবদার করত। সে গয়না চায়নি। সে চেয়েছে স্বামীর সঙ্গে কথা বলার জন্য একটি মোবাইল ফোন। তার নূন্যতম চাহিদাগুলো স্বামী পূরণ করত না। এ সমস্ত জিনিস চাওয়ায় আল আমিন তাকে (মীম) মারত। অনেক সময় ঘরের ভেতর মীমকে রেখে বাইরে চলে যেত।

আল আমিন মায়ের কাছে চিঠিতে লেখেন, মা আমারে মাফ কইরা দিয়ো। অনেক স্বপ্ন ছিল তোমারে কোনদিন কষ্ট দিব না। কিন্তু এমন একজন মানুষ তুমি আমারে আইনা দিছ, যার অত্যাচার থেকে বাঁচতে এই সিদ্ধান্ত নিলাম। তিলে তিলে মরার চাইতে একবারে মরে গেলাম। সবাই আমারে মাফ কইরা দিও। সে আমারে কয়েক মাসের মধ্যে মানসিক রোগী বানাইয়া ফেলছে। পরিশেষে সবার জন্য দোয়া করে গেলাম। এমন বউ জানি কারো কপালে না জুটে।

এরপর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বাকী টাকা পরিশোধের কথা জানিয়ে চিঠির শেষে লেখা হয়, নিজে একাই মইরা যাইতাম। কিন্তু এরে যদি বাঁচাইয়া রাইখা যাই, এ আরো অনেক মানুষের জীবন নষ্ট করব, তাই মাইরা ফেললাম। অনেক স্বপ্ন ছিল রাসুলের সব সুন্নাহগুলি আমার জীবনে বাস্তবায়িত করমু, কিন্তু পারলাম না!

মায়ের কাছে লেখা চিঠিতে তার মায়ের মোবাইল নাম্বার ও নিহত মীমের নানার মোবাইল নাম্বার লেখা ছিল বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *