free tracking

কোটা আন্দোলনকারীদের হটাতে ঢাবিতে পুলিশ!

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে ঢাবির দোয়েল চত্বর এলাকা থেকে অভিযান শুরু করে তারা।

এ সময় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের একটি গ্রুপ এবং পুলিশের সাঁজোয়া যান একসঙ্গে সামনের দিকে আগাতে দেখা যায়। এছাড়া আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ছুড়তে দেখা যায়। এ অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।

এদিকে সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটের দিকে শহীদউল্লাহ হলের ভেতরে অবস্থান করা কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ জাভেদ হোসেনের উপস্থিতিতে হলের নিচে নেমে আসেন। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পুলিশকে দেখে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হামলা করে ছাত্রলীগ। মূলত ঢাবির একটি হল থেকে হামলার সূত্রপাত হয়। এরপর চলতে থাকে সংঘর্ষ। এতে আহত হয়ে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।

আহত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইডেন কলেজের ভেতরে ছাত্রলীগের হামলায় ছয় ছাত্রী আহত হয়। এ ছাড়া রাজু ভাস্কর্য, দোয়েল চত্বর, জিয়া হল, শহীদুল্লাহ হল, বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের কর্মীরা কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করে। আহতদের বেশিরভাগ মাথায় আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বিকেল ৩টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখোমুখি অবস্থান নেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে সেই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ছড়িয়ে পড়ে পুরো ক্যাম্পাসে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিকেল ৩টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এরপর দুইপক্ষ ইট-পাটকেল, লাঠিসোঁটা নিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় উত্তপ্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। পরে ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে প্রবেশ করে। যোগ দেন ঢাকা কলেজসহ ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের আরও নেতাকর্মী। পরে সংঘর্ষের একপর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেন। ক্যাম্পাসে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লাঠি-রড নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দিতেও দেখা গেছে।

এর আগে বিকেল ৩টার দিকে সরকারি চাকরিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে জড়ো হন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশে মিলিত হয়।

বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা- ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘কে রাজাকার কে রাজাকার, তুই রাজাকার তুই রাজাকার’, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র কারো বাপের না’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমার স্বাধীন বাংলায়, একের কথা চলে না’, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা , দেশটা কারো বাপের না’ অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, হামলা/মামলা দিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *