ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের নিয়োগের বিরোধিতা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় তোপের মুখে পড়েছিলেন পটুয়াখালী-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি। তার ওই স্ট্যাটাসে ক্ষোভে ফেটে পড়েন নেটিজেনরা। তারা রনির মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন।
ওই ঘটনার পর সম্প্রতি রনির সমালোচনা করে একটি ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ইউটিউবার ও বাংলাদেশি সাংবাদিক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন। সেখানে রনির বিরুদ্ধে সাংবাদিককে মারধর, রাজনৈতিক দল পরিবর্তন, আওয়ামী লীগের এমপি হওয়ার পর দুর্নীতি, অনিয়ম ও অন্যের জায়গা দখলের অভিযোগ আনেন প্রবাসী এই সাংবাদিক।
ইলিয়াস আরও জানান, ৫ আগস্টের দুদিন আগে চ্যানেল আইয়ের টকশোতে উপস্থাপিকার সঙ্গে বিচারপতি মানিকের যে অনাকাঙ্ক্ষিত ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটার ‘নাটের গুরু’ ছিলেন রনি। টকশো শেষে অশ্লীল ভঙ্গিতে রনি মানিককে বলেন উপস্থাপিকাকে একটু আদর করে দিতে। মূলত রনির এই কথাতেই শুরু হয় বিচারপতি মানিকের আক্রমণাত্মক আচরণ। মানিক যখন দীপ্তি চৌধুরীকে যাচ্ছেতাই বলে যাচ্ছিলেন তখনো রনি দাঁত কেলিয়ে অসভ্যের মতো হাসছিলেন।
এছাড়া ভিডিওতে গোলাম মাওলা রনির নাম বিকৃত করে উচ্চারণ করতে দেখা গেছে ইলিয়াসকে।
১৯ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিও ৩০ আগস্ট ইউটিউবে আপলোডের পর মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। সেখানে রনির ‘মুখোশ’ উন্মোচন করায় নেটিজেনরা ইলিয়াসকে ধন্যবাদ দেন। অনেকেই বলেন, রনিকে এতদিন আমরা সত্যিই ভালো মানুষ মনে করতাম। এক অঙ্গে এত রূপ! ধন্যবাদ ইলিয়াস আলী ভাইকে সত্যিটা তুলে ধরার জন্য।
ইলিয়াসের ওই ভিডিওটি নজরে আসলে পরদিন ৩১ আগস্ট নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন গোলাম মাওলা রনি। সেখানে ইলিয়াসের কোনো অভিযোগের জবাব দেননি রনি। তবে নাম বিকৃত করায় ইলিয়াসের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে বিচার চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এই এমপি।
রনি লেখেন, ‘সম্প্রতি আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক জনাব ইলিয়াস হোসাইন গোলাম ময়লা রনি শিরোনামে একটি ভিডিও তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে ছেড়েছেন। তিনি আমাকে আল্লাহর গোলামের পরিবর্তে ময়লার গোলাম বা আবর্জনার কৃতদাস হিসেবে অভিহিত করেছেন। জনাব ইলিয়াসের সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় নেই । কোনো কালে কথাও হয়নি। তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো স্বার্থ-নীতি নৈতিকতার দ্বন্দ্বও নেই। সুতরাং আমাকে নিয়ে তার গিবতের ধরন দেখে খুবই আশ্চর্য হয়েছি!’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমি সব বিষয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করি এবং যত নিবেদন তা আল্লাহর নিকটই পেশ করি। কোনো দিন প্রকাশ্যে কাউকে অভিশাপ দিইনি। কারো বিরুদ্ধে নালিশ করিনি। তবে গোপনে আল্লাহর নিকট বিচার চেয়েছি। আজ এই প্রথম আমি আমার আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে প্রকাশ্যে বললাম- ইয়া রব, আমার মালিক- তোমার নিকট বিচার চাই। যে বা যারা তোমার গোলামকে আবর্জনার গোলাম বানানোর চেষ্টা করছে তাদের সবার বিচার চাই। দুনিয়া এবং আখেরাতে এমন বিচার চাই যা দেখে কেবল আমি নই- তোমার অন্যান্য গোলামদের মন যেন শীতল হয়ে যায়। আমিন।’
রনির এ স্ট্যাটাসের পর নেটিজেনরা তার সমালোচনা শুরু করেন। তারা রনিকে ইলিয়াসের অভিযোগগুলোর যুক্তি খণ্ডনের আহ্বান জানান।
গোলাম মাওলা রনির উদ্দেশে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে একজন লেখেন, ‘সাংবাদিক ইলিয়াসের ওই রিপোর্টের অভিযোগগুলোর যুক্তি খণ্ডন করুন, নইলে পণ্ডিতগিরি বাদ দিন’।
আল মামুন নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘নামের ভুলটাই চোখে পড়ল। আপনার ব্যাপারে বিভিন্ন অভিযোগ করল, পারলে সেগুলো খণ্ডন করুন’।
ফিরোজ আকন্দ বলেছেন, ‘খালি বিচার দিলে হবে। উনি (ইলিয়াস) যে বিষয়গুলো উত্থাপন করেছেন, সে সব বিষয়গুলোতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করতে হবে। তারপর অভিশাপ দিতে হবে’।
সুমাইয়া সিদ্দিকা বলেছেন, ‘বাহ, শুধু নাম বিকৃত ছাড়া তার আর কোনো অভিযোগ নেই। মানে বুঝতে পারছেন সবাই। ওগুলো সবই সত্য, তাই উনার আর কী করার আছে। (শকুনের অভিশাপে গরু মরে না)’।
একে আজাদ খান লিখেছেন, ‘সাংবাদিক ইলিয়াসকে ধন্যবাদ, আপনার (রনি) দুমুখো মুখ প্রকাশ করে দিয়েছেন। কেননা এতদিন কমবেশি আপনার মুরিদ ছিলাম’।
তাসিফা ফাইজা লাবিবা লিখেছেন, ‘উনি (রনি) যে দুমুখো, সেটা হাসিনা পালানোর পর বোঝা গেছে’।
এম সাইফুর রহমান লিখেছেন, ‘দোয়াকারীকে (রনি) আইনের আওতায় এনে বদদোয়া থেকে বাঁচতে হবে’।
রনিকে ট্যাগ করে মাহমুদুল খান আপেল লিখেছেন, ‘আপনিও ক্লিয়ার করেন, আপনি বিচারপতি মানিককে বলেছিলেন উপস্থাপিকা দীপ্তিকে আদর করে দিতে, এটা কোন ধরনের সভ্যতা?
বিএম ড্রিম ওয়ার্ল্ড লিখেছে, ‘নিজেকে গুপ্ত চোরের ভূমিকায় না রেখে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করুন- আপনি কী পছন্দ করেন আর কী পছন্দ করেন না। আপনি একজন জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ হিসেবে জাতির প্রয়োজনে আপনার অবস্থান পরিষ্কার করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি সেটা না করেন আরও সমালোচনার মুখে পড়বেন। ইদানিং লক্ষ্য করা যায় আপনি একেক সময় একেক কথা বলেন। যেটা এই জেনারেশনের কাছে ধোঁয়াশার মতো লাগে। আর আপনি ইতোমধ্যেই বুঝে গেছেন, বর্তমান জেনারেশন কোনো ধোঁয়াশা পছন্দ করে না’।
প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘এক জালেম দোয়া করেছিল, আমাদের জালেমের হাত থেকে রক্ষা করো। বাকিটা ইতিহাস। আপনার দোয়ায় না জানি এবার কি হয়’!
অ্যাডভোকেট নিজাম মাহমুদ লিখেছেন, ‘ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে যায় সেরকম বয়ান বাদ দিন। জনগণের আবেগ অনুভূতিকে ধারণ করুন। ১১০০ মানুষ খুন হলো, ৩০০০০ আহত হলো, আপনি তো অনেক টাকার মালিক, কারো বাসায় গিয়ে সান্তনা দিছেন? কাউকে চিকিৎসা খরচ দিছেন? অভিভাবক হারা সন্তানের মাথায় হাত দিয়ে ৫ হাজার টাকা দেওয়ার মতো কিছু করেছেন’?
মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘আপনি সময় সময় এমন কিছু বক্তব্য দিয়েছেন, যা মানুষ আপনাকে হাসির খোরাক বানিয়েছে, আর ইলিয়াস ভাই যে তথ্য জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন, সবই সত্যে পরিণত হয়েছে। ইলিয়াস ভাইয়ের জন্য অবিরাম ভালোবাসা থাকবে’।
ডা. আতাউল্লাহ বলেন, ‘এত সুন্দর করে মিষ্টিমুখে, আলতো হাসি রেখে কীভাবে মিথ্যা বলেন, পল্টি মারেন, পা চাটেন, মানুষের গোলামি করেন; এই রহস্যটা জানতে চাই। আপনি তো নিজে নামের অর্থ নষ্ট করে, আল্লাহর গোলাম থেকে সেলিব্রিটিজম ও রাজনীতির গোলাম হয়ে গেলেন’।
নাইম তানভীর লিখেছেন, ‘আপনার নামের বিকৃতি সমর্থনযোগ্য না। তবে আশা করি নিশ্চয়ই আপনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সমালোচনার জবাব (তথ্য-প্রমাণাদি সহকারে) দেবেন’।
Leave a Reply