বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতে আশ্রয়প্রার্থী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক হাত নিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফেরত চাওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে যদি ভারত রাখতে চায় তাহলে তাকে চুপ থাকতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এই কথা জানান তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, ভারতে তার অবস্থান নিয়ে কেউ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। কারণ তাকে বিচারের আওতায় আনতে আমরা তাকে ফেরত চাই। তিনি ভারতে আছেন। মাঝে মাঝে তিনি কথা বলছেন যা সমস্যার সৃষ্টি করছে। যদি তিনি চুপ থাকতেন, তাহলে আমরা তাকে ভুলে যেতাম। মানুষ তাকে ভুলে যেত। তিনি তার নিজের জগতে থাকতেন। কিন্তু তিনি ভারতে বসে কথা বলছেন, নির্দেশনা দিচ্ছেন; এটা কেউই পছন্দ করছে না।
তিনি বলেন, সবাই এটা বুঝতে পারছে। আমরা বেশ দৃঢ়ভাবে বলেছি যে তার চুপ থাকা উচিত। এটি আমাদের প্রতি একটি অবন্ধুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত; তাকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং তিনি সেখান থেকে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমন নয় যে তিনি স্বাভাবিকভাবে সেখানে গেছেন। গণঅভ্যুত্থান ও জনরোষের কারণে তিনি পালিয়ে গেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মূলত গত ১৩ আগস্ট শেখ হাসিনার দেওয়া বিবৃতির কথা বোঝাতে চেয়েছেন। সেই বিবৃতিতে বাংলাদেশের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’, হত্যা ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের তদন্ত, চিহ্নিত ও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, হ্যাঁ, তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে না। তিনি যে ধরনের নৃশংসতা করেছেন, তাকে এখানে সবার সামনে বিচার করতে হবে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশ সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। নয়াদিল্লিকে এই ধারণা থেকে বের হতে হবে যে শুধু হাসিনার নেতৃত্বই দেশের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
ড. ইউনূস বলেন, হাসিনা ব্যতীত বাংলাদেশের সবাই ইসলামপন্থী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইসলামপন্থী এবং বাকি সবাই ইসলামপন্থী এবং এই দেশকে আফগানিস্তানে পরিণত করবে। ভারতকে এই ধারণা থেকে বের হতে হবে। বাংলাদেশ তাকে (হাসিনা) ফেরত আনবে। কারণ এটাই জনগণের চাওয়া।
তিনি বলেন, ‘নয়াদিল্লিকে এই মনোভাব ত্যাগ করতে হবে যে শুধু হাসিনার নেতৃত্বই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। ভারতের তাদের নিজেদের আখ্যান থেকে বেরিয়ে আসা উচিত যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিরাপদ থাকবে। এই আখ্যানে ভারত বিমোহিত। ভারতকে এই আখ্যান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও তাদের আরেকটি প্রতিবেশী।
দেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত হামলার সাম্প্রতিক ঘটনা এবং এ নিয়ে ভারতের উদ্বেগ প্রকাশের কথা উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, এটা একটা অজুহাত মাত্র।
সংখ্যালঘুদের অবস্থা এত বড় করে দেখানোর চেষ্টা করার বিষয়টি একটি অজুহাত মাত্র, বলেন ড. ইউনূস।
দ্য ইকোনমিক টাইমসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি-ঘর ও মন্দিরে ভাঙচুর করা হয়।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তারপর থেকে তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। প্রাথমিকভাবে তিনি অল্প সময়ের জন্য ভারতে থাকবেন বলে আশা করা হলেও এখন শোনা যাচ্ছে তার যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশ্রয় নেয়ার প্রচেষ্টা এখনো পর্যন্ত সফল হয়নি। ভারতে হাসিনার অব্যাহত উপস্থিতি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দিল্লির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস।
Leave a Reply