ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের জেরে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গত ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের একমাস-পূর্তিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় বর্তমান সরকারের কাছে নিজেদের প্রত্যাশা এবং মতামত তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আন্দোলন রাজনীতির অংশ উল্লেখ করে এক নারী সমন্বয়ক বলেন, এ রাজনীতিটা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকবে। সবার রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে, সেটা শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী হোক। সেটা থাকবে চায়ের চুমুকে। পাঠদানের সময় তিনি শুধুই শিক্ষক। কোনো ট্যাগধারী ছাত্র ও শিক্ষককে ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না।
সরকারি হাসপাতালের অনিয়মের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আন্দোলনের সমন্বয়ক ও মেডিকেল শিক্ষার্থী বলেন, যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে, রোগীদের যাতে হেনস্তা না হতে হয়, সেই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আমরা চাই, চিকিৎসা সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হোক। যেখানে শুধুমাত্র চিকিৎসক না, রোগীদেরও সেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়ে থাকে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যেসব বিষয়ে কথা হলো শিক্ষার্থীদের-
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সিভিল সার্ভিস, জুডিশিয়ালি সার্ভিসের মতো বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিসের অধীনে সব মেডিকেল শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের যদি এর অধীনে আনা যায়, তাহলে অনেক স্বচ্ছতা ও সেবার মান বৃদ্ধি পাবে।
দেশের মেধাপাচারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের চেয়েও মেধাপাচার ভয়ংকর। মেধা পাচার না হলে প্রতি বছরই দুই-একজন ড. ইউনূস বের হতো। বিদেশি পিএইচডি করতে যাওয়াদের দেশে ফিরিয়ে এনে পলিসি লেভেলে নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
মব জাস্টিস নিয়ন্ত্রণ করার অনুরোধ করে এক নারী সমন্বয়ক বলেন, এই মুহূর্তে প্রধান কাজের মধ্যে এটি একটি। মব জাস্টিস যদি সমাজের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায় এবং কুচক্রী মহল এই দুরবস্থার সুযোগ নিয়ে আমাদের ভেতর প্রবেশ করে- তাহলে এ ঐক্য নষ্ট করার চেষ্টা করবে। তাই এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে যতই পরামর্শ দিক না কেন, এটা থেকে বেরিয়ে আসবে। সে পরামর্শ তোমরা গ্রহণ করো না। তোমাদের চিন্তাই স্বচ্ছ ও সঠিক, এটা মুঠো থেকে ছাড়বে না। যদি আমরা এ স্বপ্ন থেকে দূরে সরার কোনো কাজ করি, স্মরণ করিয়ে দেবে। আমাদের কারো কোনো ইচ্ছা নেই, এ স্বপ্ন থেকে বাইরে যাওয়ার। এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা আমাদের সার্বক্ষণিক কাজ।
তিনি বলেন, ভুলক্রমে আমরা যদি সীমা অতিক্রম করি, তাহলে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে জানাবে। এ শপথ নিয়ে আমরা সবাই একত্র হলাম। যারা আজকে উপস্থিত হতে পারে নাই, তাদের জানিয়ে দিও, আমরা একযোগে, একসঙ্গে এ কাজে নামলাম। এটাকে সফল করব।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জন্ম থেকে ৫৩ বছরে এ সুযোগ আর আসে নাই। যে সুযোগ তোমরা আমাদের দিয়েছ। এ সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়। এ সুযোগ হাতছাড়া হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ থাকবে না। এটা কোনো রাষ্ট্র আর থাকবে না। এটা যেন শুধু রাষ্ট্র নয়, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যেহেতু তরুণরা এটার ঢাল ধরেছে। এ কারণে এটা ইউনিক, অন্যন্য দেশ আমরা তৈরি করতে চাই।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
Leave a Reply