ইসলামী আন্দোলন সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কোনদিকে যাবে বলে মনে করেন-জবাবে তিনি বলেন, এর ফলে কিছুটা হলেও সম্পর্কে ক্ষয়িষ্ণুভাব সৃষ্টি হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
সম্প্রতি যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম এসব কথা বলেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আগামী দিনের লক্ষ্য কী-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য কল্যাণময় রাষ্ট্র, যে রাষ্ট্র হবে প্রতিটি মানুষের। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আপনাদের মতাদর্শগত বিরোধ রয়েছে, এটা কি ঠিক-জবাবে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শগত বিরোধ, এটা শুরু থেকেই। এখনো আছে। শুধু আমাদের সঙ্গেই নয়, আরও অনেকের সঙ্গেই তাদের আদর্শগত মতবিরোধ রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব নিয়ে আমাদের অনেক প্রশ্ন আছে, ১৯৭১ সালে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে, আকিদার প্রশ্ন আছে। এছাড়াও ওলামায়ে কেরামের মতামতের সঙ্গে জামায়াতের শীর্ষ নেতা মওদুদী সাহেবের যে মতামত, তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কওমি, পির-মুরিদ-এসব ইস্যুতেও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে মতবিরোধ রয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নিয়ে নয়া জোট বা মোর্চা গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে, আপনারা কি এরকম কিছু করবেন-জবাবে তিনি বলেন, আমরা জামায়াতে ইসলামীর আরও অনেক আগে থেকে এই উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি।
শায়খে চরমোনাই বলেছেন, ১৯৭১ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিল, কেউই এই জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পরেনি। দুর্নীতি-দলীয়করণ-দুঃশাসন উপহার দেওয়াসহ দেশ পরিচালনায় তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে শাসক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু নীতি ও আদর্শের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা তাই শুধু নেতা নয়, নীতিরও পরিবর্তন চাই।
তিনি আরও বলেন, ধরুন-একজনের নাম ‘এ’, আরেকজনের নাম ‘বি’, আরেকজনের ‘সি’। তিনজনেরই চরিত্র একই রকম। বহু রক্তপাত আর আন্দোলন-সংগ্রাম করে ‘এ’কে ক্ষমতা থেকে হটালাম, বসল ক্ষমতায় ‘বি’। সেও চুরি ডাকাতি করল, দুর্নীতি-দলীয়করণ করল, এরপর আবার আন্দোলন-সংগ্রাম করে ‘বি’কেও ক্ষমতা থেকে সরালাম। এবার ক্ষমতায় বসল ‘সি’। সেও ক্ষমতায় গিয়ে একই কাজ করল। তাহলে তো কোনো লাভ হলো না। কেন লাভ হচ্ছে না, এর কারণ হচ্ছে-আমাদের এখানে দল এবং ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু নীতি-আদর্শের কোনো পরিবর্তন হয়নি। যেমন থানার একজন ওসির (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) পরিবর্তন হয়। ডিসি (জেলা প্রশাসক), এসপি (পুলিশ সুপার) বদল হয়, আমলা বদল হয়; কিন্তু ঘুস-দুর্নীতি, দলীয়করণ এবং অনিয়মের বদলি হয় না। এটা থেকেই যায়।
সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম প্রশ্ন রেখে বলেন, এর কারণ কি জানেন, কারণটা হচ্ছে-আমাদের মূলে গলদ। চিন্তাভাবনায় গলদ। এই গলদ দূর করতে না পারলে দেশের ভালো হবে না, দেশের মানুষেরও মঙ্গল হবে না। আর দেশ এবং দেশের মানুষের মঙ্গল না হলে দুইদিন পরপর আন্দোলন হবে। রক্তপাত ঘটবে। ছাত্র, যুবক, তরুণসহ সাধারণ মানুষ জীবন দেবে। এর মধ্য দিয়ে একদল ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হবে, আরেক দল ক্ষমতায় বসবে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে না। অথচ সমাজের প্রতিটি স্তরেই সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা জরুরি।
Leave a Reply