যে কারণে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা চালাতে দেরি করছে ইরান!

ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে রাষ্ট্রীয় অতিথি দেশটি সফরে গিয়েছিলেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়া। কিন্তু সেখানে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন তিনি। এ ঘটনার পর ইসরায়েলে ভয়াবহ পাল্টা হামলার হুমকি দিয়েছিল ইরান। ওই হুংকারের পর পেরিয়ে গেছে কয়েক সপ্তাহ। কিন্তু এখনো ইসরায়েলে হামলা চালায়নি দেশটি।

ইরান কেন এখনো ইসরায়েলে হামলা চালায়নি, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। পরে এ নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা।

আগে হোক বা পরে ইসরায়েলে হামলা চালাবেই ইরান, পশ্চিমাদের মধ্যে এমন বিশ্বাস প্রবল। তবে ইরানের কর্মকর্তারা বলছেন, গাজা নিয়ে চলমান যুদ্ধবিরতি এ হামলার রেডলাইন। অর্থাৎ, ওই আলোচনা ভেস্তে গেলে বা যদি মনে হয় ইসরায়েল ইচ্ছা করে আলোচনা দীর্ঘায়িত করছে, তাহলে ইহুদিবাদী রাষ্ট্রে হামলা চালাবে ইরান। তবে এ আলোচনা কত দিন চলতে দেবে ইরান, সে ইঙ্গিত এখনো পাওয়া যায়নি।

দিন দিন এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে, এখনই যুদ্ধে জড়াতে চায় না ইরান। হানিয়াহর হত্যাকাণ্ডের কয়েক সপ্তাহ পরও ইসরায়েলে ইরান হামলা না করায় গোয়েন্দা বিশ্লেষকরা এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। ২০০৬ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের ক্ষত সারিয়ে উঠে আর্থিকভাবে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে লেবানন। ইরান যদি এখন ইসরায়েলে হামলা করে বসে, তাহলে সবার আগে টার্গেট হবে দেশটিতে থাকা তেহরানের প্রক্সিরা। এটা ইরান ও লেবানন খুব ভালো করেই জানে।

সম্ভাব্য যুদ্ধের শঙ্কায় লেবাননের ধনীরা দেশ ছাড়ছেন। একই চিত্র ইরানের ভেতরও দেখা যাচ্ছে। ইরানের এমন দুর্বলতার কথা জানে ইসরায়েলও। যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য পশ্চিমারাও আপতত চাইছে না, তেল আবিব গাজার বাইরে অন্য কিছু নিয়ে ভাবুক। কিন্তু হানিয়াহর হত্যাকাণ্ড সব সমীকরণ বদলে দেয়। বিশেষ করে ইরানের মাটিতে এমন হত্যাকাণ্ড তেহরানের চরম গোয়েন্দা ব্যর্থতারই নজির, যা স্বাভাবিকভাবেই হজম হয়নি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেয়ীর।

এর আগেও বারবার ইরানের বিভিন্ন টার্গেটে নিখুঁতভাবে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। নাতাঞ্জে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা থেকে শুরু করে দেশটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আততায়ী হামলায় হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে তেল আবিব। আবার কয়েক মাস আগে ইরান থেকে তিনশর বেশি মিসাইল দিয়ে হামলা চালানো হলেও ইসরায়েলের তেমন কোনো ক্ষতিই হয়নি। উল্টো সুরক্ষার মোড়কে থাকা নাতাঞ্জের কাছে একটি রাডার স্টেশনে গত এপ্রিলে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালায় ইসরায়েল।

হানিয়ার হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমেও একই ধরনের বার্তা ইরানকে দিয়েছে ইসরায়েল। এত নিরাপত্তার মাঝেও হানিয়াকে অনেকটাই নির্বিঘ্নে হত্যা করতে সক্ষম হয় তেল আবিব। এর মাধ্যমে ইরানকে ইসরায়েল যে বার্তা দিয়েছে, তা হচ্ছে, তোমরা আমাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছ। ইসরায়েলের এই জাল ছিঁড়ে ইরান বের হতে পারবে কিনা, তা-ও প্রশ্ন সাপেক্ষ। তাই ইসরায়েলে হয়তো সর্বশক্তি দিয়ে হামলা চালাতে পারবে না ইরান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *