নির্বাচনে নিপুণকে জেতাতে যেভাবে প্রভাব খাটিয়েছিলেন শেখ সেলিম!

সময়টা ২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারি, ওই দিন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ভোট গণনায় জয়লাভ করেন সভাপতি পদে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও সাধারণ সম্পাদক পদে চিত্রনায়ক জায়েদ খান। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জায়েদ খানের কাছে ১৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার।

ভোটে পরাজয় মেনে নিতে না পেরে ফের গণনার জন্য আপিল করেন নিপুণ। কিন্তু তাতেও সেই একই ফল পায় আপিল কমিটি। এর পরের ঘটনা তো সবারই জানা। বিষয়টি মামলা পর্যন্ত গড়ায়। আদালত থেকে রায় নিয়ে পরে সমিতির চেয়ারে বসেন তিনি। আর পুরো সময় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এ অভিনেত্রী।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে নিপুণের এই দাপটের পেছনে একজন রাজনীতিবিদের প্রভাব রয়েছে। নির্বাচনে এ চিত্রনায়িকাকে জয়ী করার জন্য নির্বাচন কমিশনারদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখাতেন রাজনৈতিক নেতারা। এমনকি তাকে জয়ী করতে নাকি ১৭ বার ফোন করেছিলেন শেখ সেলিম।

শিল্পী সমিতির নির্বাচনে কমিশনার হিসেবে একাধিক ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করেন। তাদেরই একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি গণমাধ্যমকে বলেন, জীবনের হুমকি ছিল। কেননা, যেকোনো সময় তুলে নিয়ে যাওয়া হতে পারে, এ ধরনের শঙ্কা ছিল। আমাদের নির্বাচন কমিশনারদের ধারাবাহিকভাবে ভয়ভীতি দেখানো হতো, গালিগালাজ করা হতো। বলেছিল যে পুলিশ দিয়ে তুলে নেবে।

তিনি বলেন, এমন উচ্চ পর্যায় থেকে যে ফোন আসবে, তা কখনো ভাবতেই পারিনি। ওই সময় নিপুণ জয়ী করার জন্য আমাদের একজনকে ১৭ বার ফোন করেছিলেন শেখ সেলিম সাহেব, তার মতো মানুষ। যা খুবই অবাক করেছিল আমাদের।

এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা অভিনেতা পীরজাদা শহীদুল হারুন বলেন, ২০২২ সালের ওই নির্বাচনে বেশ চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল আমার ওপর। যা মানসিকভাবে খুবই আতঙ্কিত করেছিল। ভোটে নিপুণকে জয়ী করার জন্য অনেক ওপর থেকে একজন ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ একের পর এক ফোন করতে থাকে। ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ প্রায় সব মন্ত্রণালয়ের সরাসরি প্রভাব খাটাতেন তিনি, বলা যায় নিয়ন্ত্রণ করতেন। তবে সরাসরি ‘না’ বলেছি আমি।

এ অভিনেতা আরও বলেন, পরবর্তীতে মোবাইল ফোনেও আমাকে ভয় দেখানো হয়। আবার মোটা অংকের অর্থের লোভ দেখানো হয় উল্লেখ করে পীরজাদা হারুন বলেন, ওই সময় একের পর এক ফোন করে ভয় দেখানো হয় যে, আমাকে তুলে নেবে। পরে এক জায়গায় যেতে বলেন, যেখানে মোটা অংকের টাকা রাখা ছিল।

তিনি বলেন, আমি যখন তাদের প্রস্তাবে রাজি না হই, তখন ফলাফল নিয়ে মামলা করা হলো। যা পরবর্তীতে কোর্টে যায়। এরপর আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। এমনকি আমাকে একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য বানিয়ে দেয়া হলো। বিভিন্ন ঘটনায় ছোট করা হলো, এফডিসিতে আমাকে নিষিদ্ধ করা হলো।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করলে বদলে যান ঢালিউড তারকা নিপুণ। রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয়তা বাড়তে থাকে তার। তখন পরিচয় হয় শেখ সেলিমের সঙ্গে। এরপর ২০১২ সালে রাজধানী ঢাকার বনানীর অভিজাত এলাকায় অভিনেত্রীর একটি পার্লারের উদ্বোধন করেন শেখ সেলিম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *