২০২৫-এ পড়ানো হবে ২০১২ সালের সিলেবাস, ২০২৬ সালে কী?

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের প্রণীত সর্বশেষ কারিকুলাম নিয়ে নেতিবাচক অবস্থানের কথা জানিয়েছে অন্তর্র্বতী সরকার। তবে কী ধরনের কারিকুলাম আসবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। এরইমধ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রণীত ও মুদ্রিত সকল পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালে ২০১২ সালের কারিকুলামের আলোকে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হবে। সে হিসেবে আগামী বছর নতুন কোনও কারিকুলাম আসছে না। তবে ২০২৬ সালে নতুন বা পরিমার্জিত কারিকুলাম আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ২০১২ ও ২০২৩ সালের কারিকুলামের সমন্বয়ে পরিমার্জিত কারিকুলাম আসতে পারে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলামকে কমিটির আহবায়ক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (স. মা.-২) মো. ইয়ানুর রহমানকে এ সংক্রান্ত সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এক অফিস আদেশে এ কমিটির কথা জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদে ২০১২ সালে চালু হয়েছিল সৃজনশীল পদ্ধতি। তবে তা বাদ দিয়ে ২০২৩ সালে চালু হয় নতুন শিক্ষাক্রম। এটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনাও হয়েছে। পরে অন্তর্র্বতী সরকার এসে কারিকুলামের স্থলে ২০১২ সালেরটিতে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এর আলোকে প্রণীত পাঠ্য বইয়ের কারণে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

২০২৫ সালে ২০১২ সালের কারিকুলামের আলোকে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হবে। সে হিসেবে আগামী বছর নতুন কোনও কারিকুলাম আসছে না। তবে ২০২৬ সালে নতুন বা পরিমার্জিত কারিকুলাম আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ২০১২ ও ২০২৩ সালের কারিকুলামের সমন্বয়ে পরিমার্জিত কারিকুলাম আসতে পারে।

সে অনুযায়ী, ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা হবে সৃজনশীল পদ্ধতিতে ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। তাদের জন্য বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হবে। শিক্ষার্থীদের আগের মতো আগামী বছর থেকে নবম ও দশম শ্রেণিতে পৃথক বই পড়তে হবে। আগামী বছর শাখা ও গুচ্ছভিত্তিক সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্য বইয়ের আলোকে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি শেষে ২০২৭ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা হবে। শিক্ষা উপদেষ্টা ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।

এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরী শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আজ ছুটির দিনেও আমরা সবাই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। শিগগিরই টেন্ডার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করা হবে। আশা করি, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে পারব। ২০১২ সালের কারিকুলামের আলোকে পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন কারিকুলাম আনতে বা পরিমার্জনে অনেক সময়ের প্রয়োজন। চলতি বছর আর বেশি সময় না থাকায় আগামী বছর নতুন কারিকুলাম আনা সম্ভব নয়। সে কারণে নতুন বই ছাপিয়ে জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা। চলতি মাসেই বই ছাপার দরপত্র আহবান হতে পারে। পাশাপাশি বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ চালু এবং ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষাও নেওয়া হবে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসানকে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে সমন্বয় কমিটিতে শিক্ষা গবেষক রাখাল রাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আখতার খান, এনসিটিবির চেয়ারম্যান ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান, এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী এবং প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের সদস্য অধ্যাপক এ এফ এম সারোয়ার জাহানকে সদস্য করা হয়েছে।

এর আগে আগে অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পার নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবির বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, এটি পুরোপুরি সম্ভব নয়। শিক্ষাক্রমে আগের কিছু বিষয় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য বিভাগ আনা হচ্ছে। পরীক্ষা আনা হচ্ছে। আগামী বছরও কিছু পরিপত্র জারি করে আগের শিক্ষাক্রমের দুর্বলতাগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করা হবে। কোনো কারিকুলাম বাতিল করছি না, পুরোনো কারিকুলামেও ফেরত যাচ্ছি না।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমাদের পাঠ্যপুস্তক ছাপাতে হবে। সেজন্য আগের পাঠ্যপুস্তকে ফিরে যাচ্ছি। এর মানে নয় যে, আগের কারিকুলামে ফেরত যাচ্ছি বা নতুন কারিকুলাম বাতিল হয়ে গেল। এ কারিকুলাম ভেতরেও কিছু কিছু ভালো জিনিস ছিল। আগামী বছরজুড়ে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসে মাঝে মাঝে পরিপত্র জারি করে যতটুকু সংশোধন করা যায়, করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *