সেনাবাহিনী বিক্ষোভ দমনে সমর্থন না দেয়ায় হাসিনার পতন নিশ্চিত হয়!

বাংলাদেশে বিক্ষোভের মুখে ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা হঠাৎ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। চলে যাওয়ার আগের রাতে সেনাপ্রধান তাঁর জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেন কারফিউ জারি রাখতে সেনারা বেসামরিক লোকদের ওপর গুলি চালাবেন না। পরে বৈঠকের আলোচনা সম্পর্কে জানেন— এমন দুজন সেনা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান পরদিন সকালে শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে যান। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানান, তিনি দেশজুড়ে যে কারফিউ ডেকেছেন, তা বাস্তবায়নে তাঁর সেনারা অপারগ। বিষয়টি সম্পর্কে ব্রিফ করা হয়েছে, এমন একজন ভারতীয় কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার পত্রিকার রয়টার্সের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, আগের রাতেই পতন নিশ্চিত বুঝে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সরকার কারফিউ জারি করেছিল। কিন্তু সেই কারফিউ প্রয়োগ করার উপায় ছিল না। কারণ, সেনাবাহিনীর সমর্থন হারিয়ে ফেলেছিলেন হাসিনা। যে দিন তিনি দেশ ছাড়লেন, তার আগের রাতেই সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান হাসিনার দফতরে গিয়েছিলেন। সেনাপ্রধান তাঁকে বলে দিয়েছিলেন, আর তাঁরা আন্দোলনকারীদের ওপরে গুলি চালাবেন না। কারফিউর মাঝে কেউ রাস্তায় বেরোলেও তাঁদের দমন করা হবে না। এ ক্ষেত্রে বার্তা ছিল স্পষ্ট, হাসিনার কাছ থেকে সমর্থন তুলে নিচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

রয়টার্স জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর এই সিদ্ধান্তই হাসিনার পতন নিশ্চিত করে দিয়েছিল। নির্ধারণ করে দিয়েছিল তাঁর ভাগ্যও। গত রবিবার রাতে সেনাপ্রধান ওয়াকার তাঁর জেনারেলদের সঙ্গে নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকেই সরকারের পক্ষ থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাতেই হাসিনাকে জানানো হয় সেই সিদ্ধান্তের কথা।

মনে করা হচ্ছে, সেনাবাহিনীর সমর্থন হারানোর পরেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন হাসিনা। পরিস্থিতি হাসিনার হাতের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল। সোমবার অবশেষে ইস্তফার কাগজে সই করেন হাসিনা।

সূত্রের খবর, পদত্যাগের জন্য হাসিনাকে ৪৫ মিনিট সময় বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ সেনা। তিনি বিদায়ী ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন। তাঁকে সেই সুযোগও দেয়া হয়নি বলে দাবি বিভিন্ন সূত্রে। পদত্যাগ করে বোন রেহানার সঙ্গে সোমবার দেশ ছাড়েন হাসিনা। তাঁর ১৫ বছরের শাসনকাল শেষ হয়েছে। বর্তমানে হাসিনা দিল্লিতে রয়েছেন। মঙ্গলবার ভারত সরকার জানিয়েছে, হাসিনা মানসিকভাবে বিপর্যন্ত। তাই তাঁকে আপাতত কিছু দিন সময় দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এই সময়ের মধ্যে। তারপর তা ভারত সরকারকে জানানো হলে দিল্লি সেই মতো পদক্ষেপ করবে। হাসিনা লন্ডনে যেতে চেয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছিল। তবে এখনও সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। ভারতে থেকে তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

অন্য দিকে, হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর বাংলাদেশের শাসন এখনও সেনাবাহিনীর অধীন। সেনাবাহিনীর অধীনেই গঠিত হবে তদারকি সরকার। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসকে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করা হয়েছে।

সোমবার বিকেলে শেখ হাসিনাকে নিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি পরিবহন উড়োজাহাজ দিল্লির বাইরে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে।

ভারতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তার তথ্যমতে, সেখানে ভারতের ক্ষমতাধর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে হাসিনার সাক্ষাৎ হয়েছিল।

সূত্র: রয়টার্স, আনন্দবাজার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *