ইউনূস-মোদি বৈঠকের ভবিষ্যৎ কী!

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ভারতে অবস্থান করছেন। বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক তলানিতে।

এদিকে এরই মধ্যে জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশন শুরু হয়েছে। এতে অংশ নেবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। ঐ সময় মোদির সঙ্গে সাইড লাইনে বৈঠক হতে পারে ড. ইউনূসের। তবে এতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এতটা আগ্রহী নন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক ভারতের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় হয়ে উঠেছে। যেকোনো উচ্চপর্যায়ের সাক্ষাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার ক্ষেত্রে ভারতকে এমন বিষয়গুলো নিয়ে মনোযোগী হতে হবে, যা তারা বর্তমানে এড়িয়ে যেতে চায়।

কুগেলম্যান বলেন, প্রধান সমস্যা হলো ভারতে শেখ হাসিনার উপস্থিতি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাকে (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের দাবি করলেও দিল্লি তাকে ছাড়তে চাচ্ছে না। কারণ, শেখ হাসিনার সঙ্গে নানাভাবে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে।

বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, যদি মোদি-ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তাহলে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এড়ানো অসম্ভব হবে।

গত সপ্তাহে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ঢাকা থেকে আসা মোদি এবং ইউনূসের মধ্যে বৈঠকের অনুরোধ মানা হবে কিনা, তা দিল্লি এখনো নিশ্চিত করেনি। তবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য এ মাসের শেষের দিকে দুজনেরই নিউইয়র্কে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, তারা ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে, যেন আগস্টে গণবিক্ষোভ দমনে চালানো প্রাণঘাতী সহিংসতার মামলায় তার বিচার করা যায়।

প্রাথমিকভাবে শেখ হাসিনার ভারতে অল্প কিছুদিন থাকার কথা ছিল। তবে প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে শেখ হাসিনার আশ্রয় প্রার্থনার চেষ্টা এখন পর্যন্ত সফল হয়নি।

এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, মোদি-ইউনুস বৈঠক ভারতের জন্য অস্বস্তিকর হলেও, বৈঠকটি যত দ্রুত হবে, দিল্লির জন্য ততই ভালো হবে। দিল্লিকে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িত হওয়া শুরু করতে হবে, যা কখনোই ভারতের সমীকরণে ছিল না। ভারত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের ওপর বাজি ধরেছিল এবং বাংলাদেশিদের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে চেষ্টা করেনি। ভারতের এটা বোঝার সময় এসেছে, দুই দেশের সম্পর্ক শুধু একটি রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে না।

সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *