তোফাজ্জলকে ছাড়তে ৩০ হাজার টাকা চাওয়া হয়, দাবি পরিবারের!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে গণপিটুনিতে নিহত তোফাজ্জল হোসেনের পরিবারের কাছে টাকা দাবি করা হয়। তোফাজ্জলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ফোন করে ৩০ হাজার টাকা দাবি করা হয় বলে জানিয়েছেন তার ফুফাতো বোন আসমা আক্তার তানিয়া।

তানিয়া বলেন, ‘রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমার বাবাকে একজন ফোন দিয়ে বলেন, তোফাজ্জল চুরি করতে এসে ধরা পড়েছেন- এখন ৩০ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আমার বাবা তার কথা বুঝতে না পেরে আমাকে ওই নম্বরটি দেন।

আমি ওই নম্বরে কল দিলে আমার কাছেও একই দাবি করেন। তখন আমি তাদের অনুরোধ করে বলি, তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন তাকে আপনারা মাইরেন না- তাকে সন্দেহ হলে থানা পুলিশের কাছে দিয়ে দিন। তারা আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে গেছে।’
এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আইনিভাবে পরিবার লড়বে বলে জানিয়েছেন তানিয়া।

বুধবার দিবাগত রাতে ‘চোর সন্দেহে’ মারধর করা হয় তোফাজ্জলকে। তিনি মূলত মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানিয়েছে পরিবার। তোফাজ্জল হোসেন (৩২) বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মৃত আবদুর রহমান।

তিনি নিজ ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ছিলেন।
এ ঘটনাকে অমানবিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়।

এ ঘটনায় তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি দ্রততম সময়ে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করেছে।

সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযোগকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছেন বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম সাহাবুদ্দিন শাহীন।

মামলার এজাহারে মোহাম্মদ আমানুল্লাহ উল্লেখ করেন, ‘গত ১৮-০৯-২০২৪ ইং তারিখ রাত ৭টা ৪৫ মিনিটে একজন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাকে আটক করে প্রথমে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের গেস্টরুমে নিয়ে সে মোবাইল চুরি করেছে বলে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারে।

তাকে জিজ্ঞাসা করলে তার নাম তোফাজ্জল বলে জানায়। পরবর্তী সময়ে সে মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাকে ফজলুল হক মুসলিম হলের ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খাইয়ে তাকে ফজলুল হক মুসলিম হলের দক্ষিণ ভবনের গেস্টরুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে পেছনে হাত বেঁধে স্টাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দ্বারা উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধড়ক মারধর করলে সে অচেতন হয়ে পড়ে। তার এ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষককে জানানো হলে তাদের সহায়তায় অচেতন যুবককে ধরাধরি করে মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে ওই যুবককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১৯-০৯-২০২৪ ইং তারিখ রাত ৪ ঘটিকার সময় তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ওই ঘটনার বিষয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ওই এজাহার করতে সামান্য বিলম্ব হয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *